সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৩ পূর্বাহ্ন
আব্দুস সবুর, ভ্রাম্যমান প্রতিবেদক :
রাজশাহীর তানোরে আদম পাচারকারী মনির উদ্দিনের খপ্পরে নিঃস্ব হয়েছেন এক পরিবার বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এঘটনায় দুবাইয়ে থাকা রাজু আহমেদের স্ত্রী নিপা খাতুন বাদি হয়ে মঙ্গলবার আদম পাচারকারী মনির উদ্দিনকে বিবাদী করে তানোর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
আদম পাচারকারী মনির উদ্দিনের বাড়ি উপজেলার কামারগাঁ ইউপির ধানোরা গ্রামে। তিনি আজহার আলীর পুত্র। বর্তমানে আদম পাচারকারী মনির উদ্দিন গত প্রায় দু’মাস ধরে নিজ গ্রামে অবস্থান করছেন। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে গোপনে দুবাই পাড়ি দিতে পারেন মনির বলে দাবি ভুক্তভোগীর।
অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার কামারগাঁ ইউপির হাতিশাইল গ্রামের রাজু আহমেদকে ভালো কোম্পানিতে চাকুরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গত প্রায় ৯ মাস আগে সাড়ে ৩ লাখ টাকা নিয়ে দুবাইয়ে নিয়ে যায় মনির উদ্দিন। কিন্তু দুবাই নিয়ে গিয়ে কোন কাজ দেয়া হয়নি রাজু আহমেদকে। মনিরকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়েছেন প্রবাসী ঋনসহ একাধিক এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে। রাজু আহমেদ দুবাইতে অবৈধ শ্রমিক হিসেবে বন্ধি অবস্থায় জীবন-যাপন করছেন। এমন অবস্থায় আদম পাচারকারী মনির উদ্দিনকে বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য একাধিকবার বলেন রাজুর স্ত্রী নিপা খাতুন। কিন্তু মনির উদ্দিন উল্টো হুমকি দিয়ে বলে তোমার স্বামী বেঁচে আছে এটাই বড় ব্যাপার। এসব বিষয় নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিলে তোমার স্বামীকে দুবাইতে মেরে ফেলা হবে। আর তোমারও অবস্থা খারাপ হবে বলেও হুমকি দেয় মনির উদ্দিন।
স্থানীয়রা জানায়, রাজু আহমেদ সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ধানুরো গ্রামের দুবাইয়ে কাজ করা মনির উদ্দিন ভালো কোম্পািিনতে কাজ দিবেন বলে তার মাধ্যমে যেতে নানা কৌশল অবলম্বন করেন। অবশ্য রাজুর সাড়ে তিন লাখ টাকা দেয়ার ক্ষমতা ছিল না। প্রতিবেশি ও গ্রামের লোকজনের সহায়তা ও প্রবাসী ঋণ নিয়ে টাকা দেন। মনিরকে সবাই অনুরোধ করেছিল রাজু যাতে কোন খপ্পরে না পড়েন। মনির ওই প্রতিজ্ঞা করে বলেছিল রাজু যে কোম্পানিতে যাবে সেখানে ভালো বেতন খাওয়া সবকিছুই পাবেন। কিন্তু মনির রাজুর সাথে মহা প্রতারণা করেছেন। রাজু দীর্ঘ ৯ মাস ধরে কাজ পায়নি। টাকাও পাঠাতে পারেনি। এসব নিয়ে মনিরের কাছে রাজুর স্ত্রী বারবার বললেও কোন কর্ণপাত করেনি। উল্টো রাজুর স্ত্রীকে নানা ভাবে হুমকি ধামকি দেয়। বর্তমানে রাজুর স্ত্রীর কাছে সকাল বিকেল কিস্তি নিতে লোকজন আসছে। দু’বেলা খেতে পাচ্ছে না কিস্তি দিবে কোথায় থেকে। কিন্তু কিস্তির লোকজন তো এসব শুনবে না। প্রতিনিয়তই তার বাড়িতে আসে লোকজন। রাজুর স্ত্রী দু সন্তান নিয়ে চরম মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। মনির উদ্দিন কোন ভাবে দুবাইতে পাড়ি দিলে রাজুর সমস্যার সমাধান হবে না। এজন্য মনির বাড়িতে থাকা অবস্থায় সমাধান করতে হবে। রাজু আহমেদের স্ত্রী নিপা খাতুন জানান, আমার স্বামীর সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে বিদেশ গিয়ে মহাবিপদে পড়ে রয়েছেন। দীর্ঘ ৯ মাস ধরে কোন কাজ না করে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন। সে দুবাইতে মহাবিপদে আছেন, আর আমি সন্তান নিয়ে এখানে বিপদে পড়ে আছি। প্রতিদিন কিস্তির লোকজন আসছে। আপনি এখন কি চাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, দীর্ঘ ৯ মাসের বেতন ও বৈধ শ্রমিক হিসেবে কাজের ব্যবস্থা করে দিতে হবে মনির উদ্দিন কে। আমি মনিরের কাছে একাধিক বার গিয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। কিন্তু মনির সমাধান না করে উল্টো হুমকি ধামকি দিত। এজন্য সুবিচার পেতে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।
আদম পাচারকারী মনির উদ্দিন জানান, রাজু আহমেদকে বৈধ ভাবেই দুবাইতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। জরিয়াল টেকনিশিয়ান সার্ভিস এজেন্সির মধ্যমে তাকে দুবাই নিয়ে যাওয়া হয়। রাজুকে যে কোম্পানির ভিসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সে কোম্পানিকে সিলগালা করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
তাহলে আপনি কেন ওই কোম্পানিতে নিয়ে গেলেন জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার জানা ছিল না। রাজু আহমেদকে যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে তিনি নিরাপদ আছেন। সে তো এখন অবৈধ শ্রমিক যে কোনো সময় আটক হতে পারেন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন, বাহিরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। তাকে বৈধ শ্রমিক করতে দুবাইয়ের ৩৮ হাজার টাকার প্রয়োজন। আপনি এখানে রাজু দুবাইতে কিভাবে সমস্যা দুর হবে জানতে চাইলে তিনি জানান, যে এজেন্সির মাধ্যমে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সে এজেন্সি কে টাকা দিলে বৈধতা পাবে।
এব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মজিবর রহমান জানান, আগামী রবিবারে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে একটা সমাধান করা হবে।
Copyright @ 2024 Jonotarsomoy24.com । জনতার সময়২৪. All rights reserved
Leave a Reply